গুগল তাদের সাম্প্রতিক প্রতিটি আপডেটে পেইজ স্পীডের উপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছে। তাদের ভাষ্যমতে দ্রুত লোড হওয়া ওয়েবসাইট ভিজিটর বেশি পছন্দ করে। সাধারণ ভাবে চিন্তা করতে গেলে বিষয়টা একদম ঠিক। আপনি নিজে চিন্তা করে দেখেন ১ সেকেন্ডের আগে লোড হওয়া ওয়েবসাইট রেখে কি আপনি দেরিতে লোড হওয়া ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন?
ওয়েবসাইটে ভিজিটর এনগেজমেন্ট বাড়ানো সহ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বৃদ্ধি করার জন্য ওয়েবসাইট স্পীড এবং অ্যাভেলেবিলিটির প্রতি আমাদের নজর দিতে হবে। এই ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য বর্তমান সময়ে কন্টেন্ট ডেলিভারি সার্ভিস টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। আমাদের আজকের লেখায় ক্লাউড ফ্লেয়ার কি? ক্লাউড ফ্লেয়ার কিভাবে কাজ করে এবং এর সুবিধা অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করবো।
ক্লাউড ফ্লেয়ার মূলত একটি কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার। অর্থাৎ ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনের কন্টেন্ট ঠিকভাবে ডেলিভারি দেওয়ার জন্য এই সার্ভিস কাজ করে। অনেক গুলো সিডিএন বর্তমানে প্রচলিত থাকলেও ক্লাউড ফ্লেয়ার সব থেকে উপরের দিকে আছে।
কোন সিডিএন কে বিচার করা হয় তার বিশ্বব্যাপী সার্ভিসের জন্য। সে দিক থেকে Cloudflare অনেক এগিয়ে কারণ তাদের সার্ভিস পুরো বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত। নিরবিচ্ছিন্ন সার্ভিস দেওয়ার জন্য তারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি বড় বড় শহরে তাদের ক্যাশ সার্ভার সেটআপ করেছে।
Cloudflare কি সে সম্পর্কে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ধারনা পেতে হলে আপনাকে ডোমেইন হোস্টিং এবং ক্লাউড ফ্লেয়ারের কাজ সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। ক্লাউড ফ্লেয়ারের কাজ সম্পর্কে একটু পরেই আলোচনা করা হবে তবে এখানে আপনাদের সুবিধার্থে ক্লাউড ফ্লেয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ক্লাউড ফ্লেয়ার একটি আমেরিকান ওয়েব সিকিউরিটি সম্পর্কিত পাবলিক কোম্পানি। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে ৩ জন ওয়েব সিকিউরিটি এক্সপার্টের দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা তিনজন মূলত হানিপট নামক একটি ওপেনসোর্স ইন্টারনেট সিকিউরিটি প্রোজেক্টে কাজ করতেন। তারপর তারা তিনজন মিলে Cloudflare প্রতিষ্ঠিত করেন। ক্লাউড ফ্লেয়ারের তিনজন প্রতিষ্ঠাতারা হলেন ম্যাথু প্রিন্স, লি হলওয়ে এবং মিশেল জ্যাটলিন।
তারা একটি সিকিউরিটি ফ্রাস্ট সিস্টেম তৈরি করেছে যা ব্রাউজার এবং হোস্টিং এই দুইটির মাঝখানে প্রক্সি হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইট এর ডাটা যে সার্ভারেই থাকুক তা আপনার ভিজিটরকে দেখানোর কাজ করে ক্লাউড ফ্লেয়ার। যার ফলে আপনার ওয়েবসাইটে কেউ অ্যাটাক করলে তা আপনার হোস্টিং এ না গিয়ে Cloudflare সার্ভারে আঘাত করে। এতে আপনার মুল ওয়েবসাইট সুরক্ষিত থাকে।
আসলে ক্লাউড ফ্লেয়ার ক্যাশ সার্ভার ইউজ করে সার্ভিস প্রদান করে। ক্যাশ সার্ভার গুলো মূলত একটি ওয়েবসাইটের মিরর তৈরি করে তা ভিজিটরকে শো করে। সহজ ভাষায় আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইট ক্লাউড ফ্লেয়ারে অ্যাড করেন তখন তা আপনার ওয়েবসাইটের লাইভ ভার্সন ডাউনলোড করে তাদের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সার্ভার গুলোয় স্টোর করে রাখে।
ভিজিটর যখন আপনার ওয়েবসাইটে ঢোকার চেষ্টা করে ক্লাউড ফ্লেয়ার তখন উক্ত ভিজিটরের লোকেশন অনুযায়ী সবথেকে কাছের সার্ভার থেকে ওয়েবসাইট শো করায়। এতে ল্যাটেন্সি কমে ওয়েবসাইট অতি দ্রুত লোড হয়। আশা করা যায় Cloudflare কি তা বুজতে পেরেছেন তাহলে চলুন ক্লাউড ফ্লেয়ারের কাজ কি সে সম্পর্কে জেনে নেই।
আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি ক্লাউডফ্লেয়ার কি। কিন্তু এর কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে তেমন কিছু জানা হয়নি। চলুন তাহলে জেনে নেই।
ক্লাউডফ্লেয়ার বহুমুখী কাজ করে। এটি একাধারে ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি নিশ্চিত করে, সাথে ওয়েবসাইটের স্পীড সবসময় ফাস্ট রাখে। ওয়েবসাইটে ভাইরাস অ্যাটাক বা হ্যাকিং অ্যাটাক যেমন ডিডস অ্যাটাক রুখে দেয়। আনঅথরাইজ অ্যাক্সেস এবং লগইন হলে ক্লাউড ফ্লেয়ার তা রুখে দেয়।
একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে গেলে অনেকগুলো সিকিউরিটি ইস্যু নিয়ে সচেতন হতে হয়। না হলে ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়া সহ অনেক ধরনের লস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ম্যানুয়ালি ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি মেইন্টেইন করা অনেক কষ্টের এবং সময় সাপেক্ষ বেপার। আপনার যদি একের অধিক ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনার ঝামেলা আরও বেড়ে যাবে। যাইহোক আপনার যাতে ম্যানুয়ালি এসকল কাজ করতে না হয় সে জন্য ক্লাউডফ্লেয়ার তাদের সার্ভিসের মধ্যে সিকিউরিটি যোগ করে দিয়েছে।
ক্লাউড ফ্লেয়ার প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য তাদের শক্তিশালী নিজস্ব ফায়ারওয়াল ইউজ করে। এছাড়া ডিডস অ্যাটাক থেকে ওয়েবসাইটকে রক্ষা করে। ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় ,অপ্রয়োজনীয় বট আসে। এদের মধ্যে কিছু আছে যারা প্রয়োজনে আসে যেমন সার্চ ইঞ্জিন থেকে আসা বট কন্টেন্ট ইনডেক্স করার জন্য আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় বটের সাথে অনেক অপ্রয়োজনীয় বট ওয়েবসাইটে আসে যারা সার্ভার বিজি রাখার চেষ্টা করে। ক্লাউড ফ্লেয়ার বট প্রটেকশনের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় বট থেকে ওয়েবসাইটকে রক্ষা করে।
ভিপিএন সুবিধা থেকে শুরু করে আরও অন্যান্য অনেক সিকিউরিটি রিলেটেড বিষয়ে ক্লাউড ফ্লেয়ার আমাদের সহযোগিতা করে। মূলত তাদের প্রায় অনেক প্রয়োজনীয় সার্ভিস ফ্রি তে ইউজ করা যায়। এটি তাদের একটি বেস্ট পার্ট।
আমরা জানি সার্ভার ভিজিটর থেকে যত দূরে থাকবে ল্যাটেন্সি তত বেশি হবে। অর্থাৎ আপনি বাংলাদেশ থেকে যদি আমেরিকার সার্ভারে থাকা একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করেন তাহলে আপনাকে অনেক বড় একটি রাউটিং রুট পারি দিতে হবে। আপনার ব্রাউজার থেকে সেন্ড করা রিকোয়েস্ট কয়েকটি আলাদা আলাদা দেশের সার্ভার পয়েন্ট পারি দিয়ে আমেরিকায় পৌঁছাবে। সেখান থেকে আবার একই দূরত্ব পারি দিয়ে আসতে এমনিতেই অনেক সময় চলে যাবে। যার ফলে আপনি আমেরিকা থেকে যত দূরে থাকবেন আপনি তত স্লো স্পীড পাবেন। এটি যেমন ইউজারের জন্য বিরক্তিকর তেমনি সার্চ ইঞ্জিনের জন্য। অতএব এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে হবে।
এই ক্ষেত্রে Cloudflare আপনাকে সাহায্য করবে। কারণ বিশ্বের বড় বড় শহর গুলোতে তাদের ক্যাশ সার্ভার বসানো আছে। আপনাকে অল্প সময়ের মধ্যে ওয়েবসাইট ডেলিভারি দিতে এসকল ক্যাশ সার্ভারের কোন জুড়ি নেই। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে ধরুন আপনি বাংলাদেশ থেকে কানাডার একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। এখন উক্ত ওয়েবসাইট এর সার্ভার যে দেশেই থাকুক তা যদি ক্লাউড ফ্লেয়ার সার্ভিস ইউজ করে তাহলে ভারত থেকে উক্ত ওয়েবসাইট আপনাকে শো করানো হবে।
যেহেতু ভারত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ সেহেতু ওয়েবসাইটটি অতি দ্রুত লোড হবে। এ তো গেলো শুধু রাউটিং ল্যাটেন্সির বিষয় এছাড়া ওয়েবসাইট কন্টেন্ট যেমন টেক্সট, ইমেজ এবং ভিডিও অনেক দ্রুত ক্যাশ হয়। তাছাড়া ওয়েবসাইট মোবাইলের জন্য আলাদাভাবে অপ্টিমাইজ করার সুবিধাও পাওয়া যায়। মোটকথা ওয়েবসাইট পারফরমেন্স বৃদ্ধি করার জন্য Cloudflare এর কোন বিকল্প নেই।
Cloudflare এর ডিএনএস সার্ভিস অনেক দ্রুত কাজ করে। ডিএনএস রিসল্ভিং এ কোন সমস্যা হয়না এবং তাদের ডিএনএস রিলেটেড সিকিউরিটি অনেক ভালো। চায়না তে তাঁদের আলাদা ডেডিকেটেড সার্ভিস আছে যা দিন দিন গ্রো করছে। তাছাড়া তারা তাদের ব্যাকবোন তৈরি করে ফেলেছে যা নিঃসন্দেহে ট্রাস্ট করা যায়।
ক্লাউড ফ্লেয়ার ইউজ করা অনেক সহজ একটা বিষয়। শুরুতে আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। প্রয়োজনীয় ডাটা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পর তারা আপনাকে ইমেইল ভেরিফিকেশন করতে বলবে।
ইমেইল ভেরিফিকেশন হয়ে গেলে তাদের ওয়েবসাইটে পুনরায় লগইন করুন। এরপর তারা আপনাকে আপনার ওয়েবসাইট অ্যাড করতে বলবে। মনে রাখবেন ক্লাউড ফ্লেয়ার সেটআপ করার জন্য আপনার ডিএনএস এডিট করতে হবে। অতএব পুরোপুরি ডিএনএস কাজ করার জন্য কিছু সময় নেবে।
যাইহোক যখন ক্লাউড ফ্লেয়ারে আপনার ওয়েবসাইট অ্যাড করবেন তখন তারা আপনাকে ডিএনএস ডাটা দিবে। যা আপনাকে আপনার ডোমেইন কন্ট্রোল প্যানেলে গিয়ে সঠিকভাবে বসিয়ে ডাটা গুলো সেভ করতে হবে। মূলত আপনাকে শুধু নেমসার্ভার অ্যাড করে হবে। অর্থাৎ ক্লাউড ফ্লেয়ার আপনাকে দুইটি নেমসার্ভার দিবে যা ডোমেইন কন্ট্রোল প্যানেলে বসাতে হবে। এই নেমসার্ভার মাইগ্রেশন হতেই যা সময় নেয়। তবে মোটামুটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুরোপুরি মাইগ্রেশন কমপ্লিট হয়ে যায়।
প্রতিটি সার্ভিসের মত Cloudflare এর সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ওয়েবসাইট তৈরি করার পর সঠিক ভাবে তা অডিএন্স এর কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের অনেক কিছুই করতে হয়। ক্লাউড ফ্লেয়ার আমাদের এই কাজকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে।
ভিপিএস হোস্টিং কি ? জেনে নিন ভিপিএস হোস্টিং এর বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ!
উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা ক্লাউডফ্লেয়ার কি, এর কাজ কি এবং সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আলোচনায় কিভাবে ক্লাউড ফ্লেয়ার ইউজ করবেন সে ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি আপনার নিজের ওয়েবসাইটে সিডিএন হিসেবে আপনি Cloudflare সার্ভিস ইউজ করবেন।
ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা এখন শীর্ষে। অনলাইন বিজনেস সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম মাদ্ধম হচ্ছে ই-কমার্স। যেকোন…
ই-কমার্স বর্তমান সময়ে অনলাইনে কেনাকাটার জন্য অনেক জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। ইন্টারনেটের যুগে ঘরে বসেই সবকিছু…
ব্যবসা কিংবা পারসোনাল ব্রান্ডিং হোক ডিজিটালি প্রেজেন্স বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর ডিজিটাল এই দুনিয়ায় ওয়েবসাইট…
প্রত্যেক ওয়েবসাইট ওনারদের কাছে ডোমেইন হোস্টিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়েবসাইটের গুরুত্ব বর্তমানে এতোই যে প্রতিটা…
USA তে প্রতিবছর নভেম্বরের ৪র্থ বৃহস্পতিবার পালিত হয় Thanksgiving Day, আর এই থ্যাংকসগিভিং ডে এর…
Exonhost বাংলাদেশের প্রথম সারির কয়েকটি হোস্টিং কোম্পানির মধ্যে একটি Exonhost এর জনপ্রিয়তার মূল কারণ, এক্সনহোস্ট…