Website

ই কমার্স ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেশন করার পদ্ধতি

ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা এখন শীর্ষে। অনলাইন বিজনেস সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম মাদ্ধম হচ্ছে ই-কমার্স। যেকোন প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব আইডেন্টি ও পণ্য প্রদর্শন করার জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকে। যাতে অনলাইনে তাদের পরিচিতি বাড়ার সাথে সাথে পণ্য বিক্রি বৃদ্ধি করা যায়।

আমাদের আজকের আলোচনায় আমরা জানবো, ই কমার্স ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেশন কি এবং এটি কীভাবে কাজ করে। পাশাপাশি স্পিড অপ্টিমাইজ করার ফলে বিজনেসে কি কি সুবিধা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

ই কমার্স ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেশন

নিচে ই কমার্স ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেশন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হল।

ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যামে ওয়েবসাইটের লোডিং টাইম কমানোর পাশাপাশি ইউজার এক্মপেরিয়েন্স উন্নত করা হয়। পেজ দ্রুত লোড হওয়ার জন্য বিভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করা হয় যাদের মধ্যে ইমেজ অপটিমাইজেশন, ক্যাশিং, জাভাস্ক্রিপ্ট ও সিএসএস মিনিফিকেশন এদের মধ্যে অন্যতম। ওয়েবসাইটের কোন ডিজাইন বা ফাংশন বড় কোন পরিবর্তন না করে ওয়েবসাইটে লোডিং ‍স্পিড বাড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে ওয়েবসাইট ‍স্পিড অপ্টিমাইজেশন বলে।

ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেশনের প্রকারভেদ

ওয়েবসাইট ‍স্পিড অপটিমাইজেশনের প্রকারভেদ নিচে আলোচনা করা হলো:

  • ফ্রন্ট এন্ড অপ্টিমাইজেশন: ফ্রন্ট অপ্টিমাইজেশন হলো এমন একটি পদ্ধতি যা সরাসরি ইউজারের ব্রাউজারে প্রর্দশিত হয়। জাভাস্ক্রিপ্ট, ইমেজ কমপ্রেশন, সি এস এস মিনিফিকেশন।
  • ব্যাক এন্ড অপ্টিমাইজেশন:ব্যাক এন্ড অপ্টিমাইজেশন ওয়েবসাইটের সাইডের পরিবর্তন কে বোঝায়। ডাটাবেস অপ্টিমাইজেশন ,সার্ভার রেসপন্স টাইম কমানো হলো ব্যাক এন্ড অপটিমাইজেশন।

ই কমার্স ওয়েবসাইট স্পিড এর গুরুত্ব

ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স নির্ভর করে তার লোডিং স্পিডের উপর। অথ্যাৎ high performance website=high speed website হিসেবে আখ্যায়িত হয়। ২০১০ সাল থেকে গুগল ওয়েবসাইটের স্পিডকে র‌্যাংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এর কারণ  পেজ স্পিড শুধুমাত্র সার্চ র‌্যাংকিং নিশ্চিত করে না বরং উন্নত ইউজার এক্মপেরিয়েন্স এনসিউর করে। ওয়েবসাইটের ফাস্ট স্পিড ভিজিটর ধরে রাখতে এবং ট্রাফিক আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ওয়েবসাইটে ট্র্যাফিক কমে যাওয়ার কারণের মধ্যে স্লো লোডিং স্পিড অন্যতম। পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোন ওয়েবসাইট ৩ সেকেন্ডের বেশি লোডিং সময় নিলে ৫৩% মোবাইল ইউজার লিভ নিয়ে থাকে। প্রায় ৭৯% ভিজিটর স্লো স্পিডের কারণে নেগেটিভ এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করে ও সাইট ভিজিট করতে উৎসাহ হারায়। 

গুগলের কাছে ওয়েবসাইট স্পিড র‍্যাঙ্কিং দেওয়ার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার। বর্তমান সময়ে এই বিষয়ে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এজন্য সার্চ ইঞ্জিন  র‌্যাংকিং পজিশন ধরে রাখার জন্য ওয়েবসাইট স্পিড আপ করার কোন বিকল্প নেই। এই কারণে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের স্পিড যেন দুই থেকে তিন সেকেন্ড সময়ের মধ্যে লোড হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ওয়েবসাইট স্পিড ভিত্তিক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান

  • যদি পেজ লোড নিতে ১ সেকেন্ড সময় নেয় তাহলে Amazon এর মতো বড় বড় ওয়েবসাইটে ক্ষতি হয় ১.৬ বিলিয়ন ডলার ।
  • কোন ওয়েবসাইটের পেজ যদি ১ সেকেন্ডের বেশি লোডিং সময় নেয় তাহলে ৭%ভিজিটর ড্রপআউট হয়, ১১% ভিউ কমে, ১৬% ভিজিটরের খারাপ অভিজ্ঞতা হয়।
  • ৭০% কাস্টমার মনে করে ওয়েবসাইটের স্পিড তাদের অনলাইন কেনাকাটাতে প্রভাবিত করছে।
  • ই-কমার্স বিজনেসের জন্য ওয়েবসাইটের লোডিং ‍স্পিড দুই সেকেন্ড হলে সেই পেজ কনভারসেশন রেট বৃদ্ধি পায়।

ই-কমার্স ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড স্লো হওয়ার কারন

প্রতিটি ওয়েবসাইট ভিজিটর যেকোন তথ্য খুজে পাওয়ার জন্য খুব দ্রুত ফলাফল আশা করে। এইজন্য একটা ওয়েবসাইট যতই সুন্দর ডিজাইন হোক কেন লোডিং স্পিড ফাস্ট না হলে ভিজিটরের আগ্রহ কমে যাবে। ওয়েবসাইটের লোডিং ‍স্পিড স্লো হওয়ার কারণগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

  • আন-অপ্টিমাইজড ইমেজ
  • আন-অপ্টিমাইজড ওয়েবসাইট
  • অতিরিক্ত প্লাগিন ব্যবহার
  • অব্যবহৃত জাভা স্ক্রিপ্ট ও সি এস এস
  • সস্তা হোস্টিং সার্ভার ব্যবহার করা
  • অতিরিক্ত এ্যাড ব্যবহার

এগুলো বাদেও অনেক সময় ভিজিটরের কম্পিউটার স্লো হতে পারে, নেট সমস্যা হতে পারে, হোস্টিং সার্ভারের সমস্যা ইত্যাদি কারণে ই-কমার্স ওয়েবসাইট স্লো হতে পারে। 

ওয়েবসাইটের স্পিড বাড়ানোর সহজ কিছু কৌশল

কি কি পদ্ধতি অনুসরণ করে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের পেজ স্পিড ফাস্ট করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। 

বেস্ট হোস্টিং সার্ভিস নির্বাচন

ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ক্লাউড হোস্টিং সব থেকে বেশি কার্যকরী। তাছাড়া ডেডিকেটেড সার্ভারের মাধ্যমেও বড় আকৃতির ই-কমার্স ওয়েবসাইট হোস্ট করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে ওয়েবসাইট দ্রুত লোড হওয়ার পেছনে সার্ভার অনেক বড় মাধ্যমে হিসেবে কাজ করে। ওয়েবসাইট কত দ্রুত লোড হবে তা নির্ভর করবে হোস্টিং সার্ভারের উপর। সহজ করে বলা যায় ওয়েবসাইটের লোডিং টাইম নির্ভর করে ওয়েব সার্ভারের উপর। এই কারণে ই-কমার্স হোস্টিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

ক্র্যাক থিম ও প্লাগিন ইউজ না করা

ওয়েবসাইট স্লো হওয়ার পেছনে ক্র্যাক থিম এবং প্লাগিন অঙ্ক বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই ধরনের থিম ও প্লাগিনের কারণে ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে থাকে। পাশাপাশি ক্র্যাক রিসোর্স ইউজ করায় সার্ভার ইউজ অনেক বেড়ে যায়। এই কারণগুলো একটি ওয়েবসাইট স্লো করে দেওয়ার পেছনে যথেষ্ট। 

ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেশন

ওয়েবসাইটের স্পিড অপ্টিমাইজেশন করার ক্ষেত্রে প্রথমে সাইট স্লো হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এই খেতে গুগলের পেজ স্পিড ইনসাইট অনেক বিস্তারিত ও প্রয়োজনীয় সাজেশন দিয়ে থাকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই পরামর্শ গুলো অনুসরন করলে স্পিড অপ্টিমাইজ করা সহজ হয়ে থাকে। অন্যদিকে আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইট যদি ওয়ার্ডপ্রেসে হোস্ট করা থাকে সে ক্ষেত্রে Wp Rocket, Light Speed Cache ইত্যাদি প্লাগিন ইউজ করে স্পিড বৃদ্ধি করা যায়। 

ওয়েবসাইট স্পিড বৃদ্ধি করার জন্য কিছু ব্যাসিক কাজ করে নিতে হয়। যে কাজ গুলো করলে শুরু থেকেই ওয়েবসাইটের স্পিড অনেক ফাস্ট থাকে এবং তেমন বেশি মডিফিকেসন প্রয়োজন পরে না। এদের মধ্যে- 

  • ভালো মানের হোস্টিং
  • লাইটওয়েট থিম ব্যবহার
  • অল্প পরিমানে এবং প্রয়োজনীয় প্লাগিন ব্যবহার
  • CDN ব্যবহার করা
  • CSS, JS এবং ফন্ট ফাইল অপ্টিমাইজেশন করা
  • ইমেজ এবং ডাটাবেস অপ্টিমাইজেশন করা
  • নিয়মিত থিম এবং প্লাগিন আপডেট রাখা

উপরে বর্ণিত পদ্ধতিগুলো অনুসরন করলে ওয়েবসাইট শুরু থেকেই অনেক কম সময়ের মধ্যে লোড হয়ে থাকে। এই ব্যাসিক জিনিস গুলো প্রতিটি ওয়েবমাস্টারের অবশ্যই পালন করা উচিত। 

CDN ব্যবহার

কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক ইউজ করার সব থেকে বড় কারণ হচ্ছে ক্যাশ সার্ভার ইউজ করা। অর্থাৎ এই টেকনোলজি ইউজ করার মাধ্যমে একই ওয়েবসাইটের কয়েকটি ডাউনলোড করা ভারসন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সার্ভারে রাখা হয়। উক্ত সার্ভারের কাছাকাছি কোন ভিজিটর উক্ত ওয়েবসাইট ভিজিট করলে তাকে তার কাছাকাছি সার্ভার থেকে রিলে করে দেখানো হয়। 

এতে ওয়েবসাইট অনেক দ্রুত লোড হয়। বর্তমানে বিশ্বে Cloudflare এর CDN সার্ভিস অনেক বেশি ইউজ করা হয়ে থাকে। তবে Cloudflare এর পাশাপাশি Google Cloud CDN, Fastly, Akamai ইত্যাদি ভালোমানের CDN সার্ভিস প্রভাইড করে থাকে। 

ওয়েবসাইট স্পিড অপটিমাইজেশনের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে সকলে হাইব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেনা। তাই স্লো ইন্টারনেট কানেকশন এ আপনার ওয়েবসাইট যেনো ভালো এবং দ্রুত লোড নেয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্তমানে বেশিভাগ ট্রাফিক মোবাইল ডিভাইসগুলো থেকে আসে। তাই পেজ ফাস্ট লোডিং হলে মোবাইল ইউজারদের ধরে রাখতে পারবেন।

উপরোক্ত আলোচনায় একটি ই কমার্স ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেশন করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ই-কমার্স ওয়েবসাইট লোডিং হতে যত সময় লাগবে তত ট্রাফিক কমতে থাকবে। চেষ্টা করতে হবে সাইট যেন ২ সেকেন্ড সময় নেয় লোড হতে। এতে ভিজিটর সাইটের প্রতি আগ্রহ হারাবে না এবং সাইটে বেশি সময় স্পেন্ড করবে। 

Share

Recent Posts

ই-কমার্স হোস্টিং নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস ও পরামর্শ

ই-কমার্স বর্তমান সময়ে অনলাইনে কেনাকাটার জন্য অনেক জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। ইন্টারনেটের যুগে ঘরে বসেই সবকিছু…

2 months ago

সবচেয়ে কম খরচে ওয়েব হোস্টিং – Nebula iHost

ব্যবসা কিংবা পারসোনাল ব্রান্ডিং হোক ডিজিটালি প্রেজেন্স বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর ডিজিটাল এই দুনিয়ায় ওয়েবসাইট…

2 years ago

ডোমেইন হোস্টিং এডভান্স গাইড

প্রত্যেক ওয়েবসাইট ওনারদের কাছে ডোমেইন হোস্টিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়েবসাইটের গুরুত্ব বর্তমানে এতোই যে প্রতিটা…

2 years ago

Black Friday Hosting Offer – IT Nut Hosting এ চলছে ৭০% ডিসকাউন্ট

USA তে প্রতিবছর নভেম্বরের ৪র্থ বৃহস্পতিবার পালিত হয়  Thanksgiving Day, আর এই থ্যাংকসগিভিং ডে এর…

3 years ago

ক্লাউড ফ্লেয়ার কি? ক্লাউড ফ্লেয়ার এর কাজ কি?

গুগল তাদের সাম্প্রতিক প্রতিটি আপডেটে পেইজ স্পীডের উপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছে। তাদের…

3 years ago

Exonhost Alternative – কেন IT Nut Hosting ব্যবহার করবেন?

Exonhost বাংলাদেশের প্রথম সারির কয়েকটি হোস্টিং কোম্পানির মধ্যে একটি Exonhost এর জনপ্রিয়তার মূল কারণ, এক্সনহোস্ট…

3 years ago