বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ব্যাবহার কারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বাড়ছে ট্রাডিশনাল মার্কেটিং পদ্ধতির পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং। আমরা “মার্কেটিং কি?” এ বিষয়ে জ্ঞান থাকলেও হয়ত ডিজিটাল মার্কেটিং কি? সে বিষয়ে কম জানি , কিন্তু আপনি যদি এ সম্পর্কে গুগলে সার্চ দিয়ে একটু জানার চেষ্টা করেন তাহলে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে নানা তথ্য পাবেন। সেই সাথে জানতে পারবেন এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কি? ঠিক এইসব বিষয় গুলো সামনে রেখে আজকে আমরা আলোচনা করবো “ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং ট্রাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য সমূহ ” আশা করি নিচের আলোচনা গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি (What is Digital Marketing)?
সাধারণত “মার্কেটিং কি?” সেটা আমরা সবাই জানি। যেমন- কোন পন্যর (নতুন বা পুরাতন) পন্যর প্রচার প্রচারণার সাহায্য বাজার সৃষ্টি করাকেই মার্কেটিং বলে। আর এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে সমস্যাটি সামনে আসে সেটি হল ওই পণ্যর সঠিক গ্রাহক খুজে বের করা। কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান এই গ্রাহক খুজে বের করার জন্য তারা সবথেকে সহজ মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র ইত্যাদি যেটাকেই ট্রাডিশনাল মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে। কিন্ত বর্তমান সময়ে এই মাধ্যম থেকে সবথেকে জনপ্রিয় মাধ্যম হল ইন্টারনেট ভিত্তিক মার্কেটিং যার নাম দেয়া হয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং।
সহজ অর্থে ডিজিটাল প্রযুক্তি (ইন্টারনেট সেবা) ব্যবহার করে কোন পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করা হয় তাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। বর্তমান সময়ে টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র থেকে বেশি ব্যাবহৃত মাধ্যম হয়ে উঠছে স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার বা ল্যাপটপ। আর এই দুটি জিনিসের অন্যতম প্রাণশক্তি হল ইন্টারনেট।
মূলত ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে দিন দিন ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে উঠছে। মানুষ যত বেশি প্রযুক্তির বাবহার শুরু করেছে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রও তত বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যাপারটা আরও সহজ ভাবে বুঝতে পারবেন যদি নিচের দেওয়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পরিসংখ্যান টি পড়ে দেখেন।
আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে একটু ধারণা লাভ করি। বিশ্বে যেখানে বর্তমানে ৪০০ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং তার মধ্যে ৩০০ কোটির বেশি মানুষ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে। (সূত্র- statista.com) সেখানে বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগনের প্রায় ৮ কোটির বেশী মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যাবহার করছে। ( সূত্র- btrc.gov.bd ) সেই সাথে জনপ্রিয় যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের ব্যবহারকারী ৩ কোটি। যেখানে ২০১২ সালে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৩১ হাজারের একটু বেশি ( সূত্র- btrc.gov.bd ) । আর সে সময়ে ফেসবুকের ব্যবহারকারী ছিল তো গুটি কিছু মানুষ । এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় কেন দিন দিন ডিজিটাল মার্কেটিং এত জনপ্রিয় হচ্ছে।
ট্রাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য সমূহ (Differences Between Traditional Marketing VS Digital Marketing)
আশাকরি উপরিউক্ত বিষয় গুলো পড়ার পর ডিজিটাল মার্কেটিং কি? এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এবার চলুন জেনে নেই ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে যে সব পার্থক্য রয়েছে সে সব বিষয় সমূহ নিয়ে —
১) সাধারণত টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র, বিভিন্ন সাইজের ব্যানার, ফেসটুন, লিফলেট, ইত্যাদির মাধ্যমে পন্য প্রচার প্রচারনাটা হলো ট্রাডিশনাল মার্কেটিং। অন্যদিকে ডিজিটাল উপায়ে পণ্যর বিজ্ঞাপন যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, সহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া ও জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে পন্যর প্রচার প্রচারনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।
২) ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এ টাকার ব্যায়ের পরিমান অনেক বেশী এবং আশানুরূপ ফলাফল অনেক কম । পক্ষান্তরে ডিজিটাল মার্কেটিং এ টাকার ব্যায়ের পরিমানের তুলনায় ফলাফল অনেক বেশী।
৩) ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের এর ফলাফল হিসেবে এর কোন পরিপূর্ণ ডাটা পাওয়া যায় না। যা কিনা ডিজিটাল মার্কেটিং প্লাটফর্মের ক্ষেত্রে এ সকল ডাটা পাওয়া সম্ভব।
৪) ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর দ্বারা টার্গেটেড কাস্টমারের কাছে বিজ্ঞাপন প্রচার সম্ভব হয় না কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে টার্গেটেড কাস্টমারের নিকট বিজ্ঞাপন প্রচার সম্ভব।
৫) ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর মাধ্যম অনেক কম এবং দিন দিন কার্যকারিতা হারাচ্ছে। অন্য দিকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যম অনেক বেশি এবং দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার ফলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৬) ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বিলিয়ন ডলারের বিজনেসে পরিণত হতে অনেক দিন সময় লাগবে। পক্ষান্তরে ডিজিটাল মার্কেটিং ( ই-কমার্স বিজিনেসের ) মাধ্যমে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অনেক কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বিলিয়ন ডলারের বিজনেসে পরিণত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় Pathao –Transport Company এর কথা। তারা মার্চ, ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করেছিল শুধু একটা আপসের মাধ্যমে এবং তারা তাদের সার্ভিসের প্রধান প্রচার প্রচারনা চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া সাইটের মাদ্ধমে। যার ফলে এখন তাদের মার্কেট ভ্যালু প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের ও বেশি। এছাড়া বিদেশি কোম্পানির মধ্যে Ali Express – Online Retail Service অন্যতম উদাহরণ।
পরিশেষে
আপনি যদি নিজে কোন উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে আপনি সহজেই ডিজিটাল মার্কেটিং ( ই-কমার্স বিজিনেসের ) মাধ্যমে বর্তমানে আপনার পন্য বা সেবার প্রচার প্রচারনা করতে পারেন। যা আপনার বিজিনেস প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
ই-কমার্স কি? কিভাবে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য সেরা ডোমেইন ও হোস্টিং কিনবেন?
এছাড়া আপনি যদি অন্যর বিজিনেসের পন্য বা সেবার প্রচার প্রচারনা করতে চান তাহলে ট্রাডিশনাল মার্কেটিং তুলনায় আপনি সহজেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বর্তমানে আপনার টারগেটেড কাস্টমারদের কাছে নির্ধারিত পন্য বা সেবার প্রচার প্রচারনা করতে পারেন। এতে করে আপনি টারগেটেড কাস্টমার তৈরি করার মাধ্যমে পন্য বিক্রি বা সেবা প্রদান করে যে কোন বিজিনেস প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন।