ই-কমার্স বর্তমান সময়ে অনলাইনে কেনাকাটার জন্য অনেক জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। ইন্টারনেটের যুগে ঘরে বসেই সবকিছু হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার কাজ করে ইকমার্স। বই থেকে শুরু করে চাল, ডাল, পোশাক ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসসহ সবকিছু অনলাইনে বেচাকেনা করা হয়। অর্ডার করার পর নিদির্ষ্ট সময় পর সবকিছু চলে আসে নিজের ঠিকানায়। একটি ই কমার্স মূলত এই ধারনার উপর ভিত্তি করেই তৈরি। ই-কমার্স ওয়েবসাইট সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সব থেকে জরুরী যে বিষয় তা হচ্ছে ভালো মানের ই-কমার্স হোস্টিং।
কারণ ই-কমার্স ব্যবসার জন্য ভিজিটর ও ট্রাফিক খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা হোস্টিং এর ধারন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। ভালো মানের হোস্টিং সার্ভার একটি ওয়েবসাইটের জন্য কাঙ্খিত ভিজিটর ও ট্রাফিক নিয়ে আসে। আমাদের আজকের আলোচনায় ই-কমার্স হোস্টিং নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
ই-কমার্স হোস্টিং নির্বাচনের আগে যা যা জানা জরুরী
নিচে ই-কমার্স হোস্টিং টিপসসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো:
সার্ভারের কর্মক্ষমতা
একটি ইকমার্স হোস্টিং নির্বাচনের পূর্বে সার্ভারের কর্মক্ষমতার উপরে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ট্রাফিক ও সার্ভারের কর্মক্ষমতা হোস্টিং এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ই-কমার্স সাইটের সাফল্য ট্রাফিকের উপর পুরোপুরি নির্ভর করে। কারণ অনলাইন স্টোরে কেনাকাটা করার জন্য ট্র্যাফিক প্রথমে ওয়েবসাইটে ভিজিট করে। এখন কাস্টমার যদি ওয়েবসাইট ভিজিট করতে না পারে তাহলে তো আর পণ্য কিনতে পারবে না।
ইকমার্স হোস্টিং এর জন্য সবার প্রথমে দেখতে হবে উক্ত সার্ভারে কি পরিমানে স্পেস আছে, হার্ড ড্রাইভের থেকে এসএসডি স্টোরেজ হিসেবে ফাস্ট এবং কার্যকরী। পাশাপাশি কি পরিমাণ র্যাম ও প্রসেসর স্পিড পাওয়া যাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। অনলাইন স্টোরের জন্য ব্যান্ডউইথ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি I/O লিমিট যেন বেশি পরিমানে পাওয়া যায় সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
নিরাপত্তা
ইকমার্স তথা সকল ধরনের হোস্টিং সার্ভারের জন্য সিকিউরিটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হোস্টিং কেনার আগে আমাদের উক্ত সার্ভারে কি কি সিকিউরিটি ফিচার আচে সে বিষয়ে ধারনা রাখতে হবে। বিশেষ করে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সার্ভারে ফায়ারওয়াল হিসেবে কোন টেকনোলজি ইউজ করা হয় তা জানা জরুরী। অন্যদিকে এস এস এল এর পাশাপাশি আর কোন ধরনের এনক্রিপশন ইউজ করা হয় এবং হ্যাকিং প্রতিরোধ করার জন্য কি ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা জরুরী।
বর্তমান সময়ে প্রায় সার্ভারে কন্ট্রোল প্যানেলের মাধ্যমে এন্টিভাইরাস ইন্টিগ্রেট করা থাকে। এতে ডিডসের মতো ক্ষতিকর হ্যাকিং অ্যাটাক থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। একটি ইকমার্স ওয়েবসাইটে অনেক বেশি পরিমানে ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরি করে। যে কারণে এখনে বট অ্যাটাক থেকে শুরু করে কমেন্টে ক্ষতিকারক লিংক দিয়ে হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়। এই সকল ক্ষতিকারক পদক্ষেপ বন্ধ করার জন্য সার্ভারে কি কি সিকিউরিটি রয়েছে সে বিষয়ে ধারনা থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সমর্থন ও নির্ভরযোগ্যতা
কোন সার্ভার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সমর্থন ও নির্ভর যোগ্যতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। টেকনোলজি পরিবর্তন হওয়ার সাথে অনেক ক্ষেত্রে সার্ভারের প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দেয়। এখন আপনি যে হোস্টিং থেকে সার্ভার নিয়েছেন সেখানে ২৪/৭ সাপোর্ট দেয় কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। এর কারণ রানিং অবস্থায় ওয়েবসাইট কাজ না করলে তখন অর্ডার মিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা একটি বিজনেসের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
এই কারণে হোস্টিং প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আপনার সাইটের যেকোন সমস্যা সমাধানে ২৪/৭ কতক্ষণ সার্পোট প্রদান করে, তাদের টিম কত দক্ষ এই সকল বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
বাজেট সীমাবদ্ধতা
ছোট অবস্থায় ইকমার্স বিজনেস শুরু করার জন্য আপনার কাছে শেয়ারড হোস্টিং উপযুক্ত মনে হতে পারে। তবে এই ধরনের হোস্টিং শুধু ছোট ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য কার্যকর। যখন বড় কোন ওয়েবসাইট যেমন এজেন্সি বা ইকমার্স ওয়েবসাইট হোস্ট করার প্রয়োজন হবে তখন অবশ্যই ডেডিকেটেড অথবা ক্লাউড হোস্টিং নির্বাচন করা সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয়।
ই-কমার্স হোস্টিং পরিকল্পনার জন্য উপযুক্ত ধরণ
নিচে ইকমার্স হোস্টিং পরিকল্পনার জন্য উপযুক্ত ধরণ গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
শেয়ার্ড হোস্টিং
শেয়ার্ড হোস্টিং সাধারণত এন্ট্রি লেভেল হোস্টিং। এটি নতুন ও ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য। শেয়ার্ড হোস্টিং একই সার্ভারে অনেকগুলো ওয়েবসাইটে রিসোর্স শেয়ার করে পরিচালিত হয়। এতে করে সার্ভার ব্যয় অনেক কমানো যায়। কিন্ত উচ্চ মাত্রায় ট্রাফিক আসে এই ধরনের ই-কমার্স সাইটের জন্য শেয়ার্ডহোস্টিং উপযুক্ত নয়। যারা নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন ছোট উদ্যোক্তা তারা ব্যবসা প্রসারের জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং ব্যবহার করতে পারেন।
ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার
ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার শেয়ারড হোস্টিং ও ডেডিকেড হোস্টিং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। এটি একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডেডিকেট সার্ভারের একটি অংশ কেটে নিয়ে নিজের ভার্চুয়াল সার্ভার তৈরি করে যা উচ্চ পারফরম্যান্স এবং শেয়ার্ড হোস্টিং এর চেয়ে বেশি স্কেবেলিটি সরবরাহ করে। এটি ওয়েবসাইটের জন্য এপ্লিকেশন হোস্টিং, ডাটাবেস সার্ভার, ই-মেইল হোস্টিং ইত্যাদি ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডেডিকেটেড সার্ভার
এটি শেয়ার হোস্টিং থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে থাকে। ডেডিকেটেড সার্ভার কনফিগারেশন একটি ব্যক্তিগত পিসির মতো কাজ করে। অর্থাৎ এই ধরনের সার্ভারের পুরো রিসোর্স শুধু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ইউজ করে। এই কারণে ওয়েবসাইটের স্পিড যেমন অনেক ফাস্ট থাকে তেমনি ওয়েবসাইট পরিচালনা করার জন্য সকল ধরনের স্বাধীনতা পাওয়া যায়। ডেডিকেটেড সার্ভার বড় ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য প্রযোজ্য। এটি পরিচালনা করা ব্যয়বহুল ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন হলেও ইকমার্স ওয়েবসাইটের জন্য এটি অনেক জরুরী।
ক্লাউড হোস্টিং
গতানুগতিক হোস্টিং থেকে ক্লাউড হোস্টিং অনেকটা আলাদা। ক্লাউড হোস্টিং ফিজিক্যাল সার্ভার ইউজ করার পাশাপাশি ভার্চুয়াল সার্ভারের রিসোর্স ইউজ করে থাকে। অর্থাৎ যখন আপনার ওয়েবসাইটে অনেক বেশি ভিজিটর আসবে তখন যেন সার্ভার ডাউন হয়ে না যায় সে জন্য ক্লাউড হোস্টিং বিভিন্ন দেশে থাকা ভার্চুয়াল সার্ভার থেকে রিসোর্স ইউজ করে। এতে সাইট একই সাথে অনেক বেশি পরিমানে ভিজিটর ম্যানেজ করতে পারে। ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ক্লাউড হোস্টিং সবথেকে বেশি উপযোগী।
ই-কমার্স হোস্টিং নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস
ইকমার্স বিজনেসের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে পণ্য ও সেবা বেচা-কেনা করা। এর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ওয়েবসাইট আর ওয়েবসাইট তৈরি ও পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন পরে হোস্টিং এর। নিচে ইকমার্স হোস্টিং কেন গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
- জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত কোম্পানি থেকে হোস্টিং কিনতে হবে। কারণ এই ধরনের কোম্পানি স্কাম করে না এবং ভালো সার্ভিস প্রোভাইড করে। পেমেন্ট মেথড সম্পর্কে জানতে হবে তা হলে বিল পেমেন্ট করতে সুবিধা হবে।
- আপনার হোস্টিং সি প্যানেল ম্যানেজড হলে ভালো হয়। কারণ এই প্যানেল সহজে বোঝা যায় এবং অনেক বেশি পরিমানে ফিচার সমৃদ্ধ। এটি আপনার হোস্টিং ম্যানেজেমেন্ট অনেক সহজ করবে।
- হোস্টিং স্পিড যাতে ভালো হয়। কারণ হোস্টিং স্পিড বেশি না থাকলে আপনার ওয়েবসাইট দ্রুত লোড হবে না। যা ব্যবসায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাই হোস্টিং স্পিড এবং ব্রান্ডউইথ সম্পর্কে শিওর হয়ে নিতে হবে।
- আপনি যে কোম্পানি থেকে সার্ভিস নেন না কেন ভালো সিকিউরিটি সিস্টেম আছে কিনা টা যাচাই করে নিতে হবে। ভালো সিকিউরিটি সিস্টেম ছাড়া আপনার বিজনেস যেকোন সময় হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
- ভালো কাস্টমার সার্ভিস পেতে পারেন এমন হোস্টিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। হোস্টি বিষয়ক যেকোন সমস্যা হলে যেন খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করার জন্য কোম্পানির কাস্টমার সার্ভিস পান সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- আপনার হোস্টিং একাউন্টে যাতে পর্যাপ্ত ইমেইল একাউন্ট ক্রিয়েট করা যায়। ওয়েব মেইলে আপনার কাস্টোমার সাপোর্ট, এমপ্লয়িদের ইমেইল এবং আভ্যন্তরীন যোগাযোগের জন্য কতগুলো ইমেইল একাউন্টের প্রয়োজন হতে পারে সেইটা জেনে দেখে হোস্টিং প্যাকেজ নিতে হবে।
বর্তমানে ই-কমার্স ব্যবসা প্রসারিত হচ্ছে। ভবিষ্যৎ ইন্টারনেটের অগ্রগতির সাথে সাথে এটি আরও নতুনভাবে হাজির হবে আমাদের কাছে। ব্যবসাকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখার জন্য হোস্টিং এর গুরুত্ব অনেক বেশি। উপরোক্ত আলোচনায় আমরা ই-কমার্স হোস্টিং নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা লাভ করলাম।