ই-মেইল কি? কিভাবে একটি ইমেইল (জিমেইল/ইয়াহুমেইল/বিজনেসমেইল/ফ্রিমেইল) আইডি খুলতে হয়? এ বিষয়ে অনেকেরই জানা থাকলেও আমরা যারা ইন্টারনেট তথা তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে তেমন কোন জানাশুনা নেই তাদের জন্য আজকের পোস্টে উল্লেখিত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
Table of Contents
ই-মেইল কি?
ই-মেইল তথা ইলেক্ট্রনিক মেইল হলো একটি ডিজিটাল বার্তা যা মূলত কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে মানুষ ডাকযোগে অথবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যে সম চিঠি-পত্র, চাকুরীপত্র, ও বিভিন্ন দরকারী তথ্য পাঠায় ঠিক তেমনি ই-মেইলের মাধ্যমে কিছু মূহুর্তের মধ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে এসব বার্তা পাঠোনো যায় বলে একে ই-মেইল বা Electronic Mail বলা হয়।
হাজার হাজার বছর আগে আফ্রিকা, আমেরিকা এবং এশিয়া অঞ্চলে বসবাসরত মানুষ দুরে অবস্থানকারী কোন মানুষের সাথে ধোঁয়ার সংকেত দিয়ে বা ঢোল বাজিয়ে যোগাযোগ শুরু করেছিল। মধ্যে যুগে মানুষ যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম যেমন- পাখি, ঘোড়া, ইত্যাদি বাহন ব্যবহার করতো। পরবর্তীতে ১৯৭২ (RFC 561) খ্রিষ্টাব্দে তদানিন্তন আরপানেটে সর্বপ্রথম ইলেক্ট্রনিক মেইল প্রেরণ করা হয়। ই-মেইল ব্যবস্থায় সহজে ই-মেইল পাওয়ার জন্য প্রথম দিকের প্রেরক এবং প্রাপক দুজনকেই অনলাইনে থাকতে হত।
এখনকার ই-মেইলগুলোতে এই ধরনের সমস্যা নেই। ই-মেইল সার্ভারগুলো প্রথমে মেইল গ্রহণ করে এবং সেগুলো সংরক্ষণ করে পরে পাঠায়। ব্যবহারকারী কিংবা প্রাপককে কম্পিউটারে এক সাথে অনলাইনে থাকার প্রয়োজন হয় না শুধু মাত্র একটি ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য ই-মেইল প্রেরন করলেই হয়।
ই-মেইলের ধরন
ইমেইল মূলত দুধরনের। প্রথমত ফ্রি ইমেইল এবং দ্বিতীয়ত পেইড। বর্তমানে ইমেইল আদান-প্রদান করার জন্য বিভিন্ন কোম্পানি বিনামূল্যে ও টাকার বিনিময়ে তাদের ই-মেইল সার্ভিস প্রদান করে থাকে। আপনি তাদের সাইটে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। নিচে বহুল ব্যবহ্রত বেশ কিছু ফ্রি ই-মেইল সার্ভিস প্রভাইডার এর নাম দেওয়া হলো।
Gmail
বর্তমানে ফ্রিতে বহুল ব্যবহ্রত ই-মেইল সেবা গুলোর মধ্যে গুগোলের (Google Gmail) জিমেইল সার্ভিস অন্যতম। ব্যবহারকারীদের বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য জিমেইল ১৫ গিগাবাইট স্পেস দিচ্ছে যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। জিমেইলের ইন্টারফেস দেখতে ওয়েবমেইলের মতো যা প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ভাবে সাজানো যায়।
Yahoo Mail
ইয়াহু মেইল (Yahoo Mail) পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবভিত্তিক ই-মেইল সেবাগুলির একটি। ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া এই সেবাটি, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ওয়েবভিত্তিক ই-মেইল সেবাদানকারী।
ALO Mail
1993 সালে America Online (AOL) and Delphi দুইজন নিলে এই ইমেইল সার্ভিস চালু করেন। Gmail এবং Yahoo Mail এর মতো অ্যাকাউন্ট খুলে আপনি ই-মেইল সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন।
Outlook
আউটলুক মাইক্রোসফটের একটি মুক্ত ওয়েবমেইল সেবা। এটি পুরনো মেইল সেবাগুলোর মধ্যে একটি যা ১৯৯৬ সালে সাবীর ভাটিয়া এবং জ্যাক স্মিথ মাউন্টেইন ভিউ, ক্যালিফোর্নিয়াতে হটমেইল নামে একটি ওয়েবমেইল চালু করেন। মাইক্রোসফট ১৯৯৭ সালে প্রায় ৪০ কোটি ডলারে এটি অধিগ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে ২০১৩ সালে হটমেইল কে Outlook.com দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়।
Yandex Mail
এটি রাশিয়ান ভিত্তিক একঠি ওয়েব মেইল সেবা। Yandex পৃ্থিবীর ৫ম বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন। Yandex মেইল অ্যাকাউন্ট খুলে আপনি ১০ জিবি পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ ই-মেইল আদান-প্রদান করতে পারবেন।
উপরোক্ত ই-মেইল সেবা ছাড়াও আরও অনেক কোম্পানি ফ্রি ই-মেইল সার্ভিস দিয়ে থাকে। আপনি গুগলে সার্চ দিলে এ রকশ অসংখ্য লিস্ট পাবেন। যেগুলো তে অ্যাকাউন্ট খুলো ই-মেইল সেবা ব্যবহার করতে পারবেন।
কিভাবে ইমেইল অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়?
ইমেইল আইডি বা অ্যাকউন্ট খোলা খুবই সহজ। কয়েকটি স্টেপ কমপ্লিট করার মাধ্যেমে আপনি একটি ইমেইল অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। আজকে আমরা কিভাবে একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় সেটা দেখবো। আপনার যখন প্রয়োজন পড়লে তখন একইভাবে একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারবেন।
জিমেইল অ্যাকাউন্ট খোলার প্রথম ধাপ
প্রথমে জিমেইল.কম ভিজিট করুন। তারপর নিচে দেখানো ছবির মতো একটি পেজ আসবে। সেই পেজ থেকে “Create an account” বাটনে ক্লিক করুন।
দ্বিতীয় ধাপ
“Create an account” বাটনে ক্লিক করার পর নিচে ছবির মতো আরেকটি পেজ আসবে। যেখানে আপনার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে। যেমন: আপনার নামের প্রথম অংশ ও নামের দ্বিতীয় অংশ; ইউজার নেম এবং পার্সওয়ার্ড দিয়ে Next বাটনে ক্লিক করতে হবে।
তৃতীয় ধাপ
“Next“ বাটনে ক্লিক করার পর আপনার ইমেইল অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য ফোন নাম্বার দিতে বলবে। উক্ত ফোন নাম্বারের জায়গায় আপনার ব্যবহ্রত নাম্বার দিবেন। তারপর ওই নাম্বারে একটি ছয় ডিজিটের ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে। সেই কোডটি বসিয়ে দিলেই ইমেইল অ্যাকাউন্টটি ভেরিফাই হয়ে যাবে।
চতুর্থ ধাপ
অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই হওয়ার পর তাদের টামর্স অ্যান্ড পলিসিতে “I am agree“ বাটনে ক্লিক করলে ব্যাস আপনার নামে একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে। এর পর আপনি ওউ ইমেইল অ্যাকাউন্ট আপনি তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহার করতে পারবেন।
ই-মেইল ব্যবহারে বিভিন্ন সুবিধাবলী
- সহজে এক স্থান থেকে বিশ্বের যে কোন স্থানে ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
- ঘরে বসেই যে কোন সময় ই-মেইল করা যায়।
- এক ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন জনকে ইমেইল পাঠানো যায়।
- ডাকযোগে ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কোন চিঠি পত্র আদান-প্রদানে যত দেরী হয় তার থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে খুব দ্রুত সময়ে চিঠি পত্র আদান-প্রদান করা যায়।
- তথ্য হারিয়ে যাওয়া কিংবা বিলম্বে পৌছানোর কোন ভয় নেই।
- বর্তমানে যে কোন কাজে অ্যাকাউন্ট খুলতে ইউজার ভেরিফাই করার জন্য ই-মেইল দরকার লাগে।
ই-মেইল ব্যবহারে বিভিন্ন অসুবিধাবলী
- অনেক সময় ইমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যাওয়ার ফরে তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত প্রাইভেসি নষ্ট সহ নানা ধরনের হ্যারাসমেন্টের স্বীকার হওয়া লাগতে পারে।
- ব্যবসায়ীক কাজে প্রতিদিন অসংখ্য কাস্টমারদেরকে অথবা লিড জেনারেশন ও সেলস প্রমোশনের কাজে অনেককে অফার বেসড ইমেইল করতে হয়। সেক্ষেত্রে ফ্রি ইমেইল সার্ভিস ব্যবহার করলে বেশিরভাগ ইমেইল গুলো স্প্যাম বক্সে যায়। তখন পেইড সার্ভিস অথবা বিভিন্ন হোস্টিং কোম্পানির ইমেইল হোস্টিং সার্ভিস নিলে এ প্রবলেব থেকে বাঁচা যায়।
- ইন্টারনেট কানেকশন, মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার তথা ডিজিটাল ডিভাইস ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ই-মেইল আদান-প্রদান করা সম্ভব না।